শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১
আন্তর্জাতিক ডেস্ক।।
পুনরায় আফগানিস্তান দখলে মরিয়া তালেবান দেশের বাকি অংশের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর রোববার থেকে রাজধানী কাবুল ঘিরে ফেলেছে। সাঈদ নামে এক বাসিন্দা এদিন সকালে ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানকে কাবুলের বর্তমান পরিস্থিতির বিবরণ দিয়েছেন।
তিনি বলছেন, মানুষজন ভীত-সন্ত্রস্ত। তারা পরিবার, তাদের স্ত্রী ও মেয়েদের নিয়ে বিশেষ করে বেশি ভয় পাচ্ছে। তালেবানের সঙ্গে সম্পৃক্ত কাবুলের কিছু বাসিন্দা এতে করে খুশি হলেও গোটা শহরের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষজন সত্যিই বেশ ভয়ে আছে।
রোববার (১৫ আগস্ট) সকালে আমি বাড়ির বাইরে ছিলাম। দেখলাম এক নারী রাস্তার পাশে কাঁদছে। মানুষজন ছোটাছুটি করছে। সবাই ঘরে ফেরার জন্য মরিয়া হয়ে যানবাহন খুঁজছেন। কোনো ট্যাক্সি নাই। ভাড়া বেড়েছে পাঁচ গুণ। তারপরও ট্যাক্সি কাউকে নিচ্ছে না।
আমি কয়েক ঘণ্টা আগে কিছু গুলির শব্দ শুনেছি। তবে এখন গোটা শহর বেশ শান্ত। প্রত্যেকে তাদের বাড়িতে আটকে আছেন। যেসব দোকান ও ব্যাংক আগে ব্যস্ত ছিল তার বেশিরভাগ বন্ধ। স্কুলশিক্ষার্থীদের আজ পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল কিন্তু হচ্ছে না।
তালেবানরা আজ সকালে কাবুলের উপকণ্ঠে এসে পৌঁছেছে। এর মধ্যে কিছু কাবুলেও প্রবেশ করেছে। তারা মানুষের সাথে কথা বলছে। আপাতত অস্ত্র নেই। পুল-ই-চরখি কারাগার (আফগানিস্তানের সবচেয়ে বড়) দখল করে সব বন্দিকে ছেড়ে দিয়েছে।
বাবর গার্ডেনসহ কাবুলের কিছু জেলায় উড়ছে তালেবানের পতাকা। বাবর গার্ডেন একটি ঐতিহাসিক জেলা যেখানে মুঘল সম্রাট বাবরকে সমাধিস্থ করা হয়েছে। কাবুলের সাত নম্বর জেলার পুলিশ স্টেশন দখল করে অস্ত্র জমার নির্দেশ দিয়েছে তালেবান।
তালেবান যে বলছে কারো ক্ষতি হবে না, তাদের এমন আশ্বাসে আমার আস্থা নেই। আমরা জানি এরপর কি ঘটবে। তারা এখন ‘দেশদ্রোহী’ খোঁজা শুরু করবে। মূলত যারা আফগান নিরাপত্তা বাহিনী এবং যুক্তরাষ্ট্র কিংবা ন্যাটো সেনাদের হয়ে কাজ করেছে।
তারা এখন কাবুলে ধনী ব্যবসায়ীদের বাড়ি টার্গেট করবে। তাদের জিজ্ঞাসা করবে, কীভাবে তারা এই অর্থ উপার্জন করেছে। এদিকে সাধারণ আফগানদের অবস্থা ভয়াবহ। গত সপ্তাহে এক প্যাকেট ময়দার দাম ছিল ১৭০০, আজ তা ২৫০০ আফগানিস।
কিছু লোক বলছেন যে, আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি ইতোমধ্যে শহর ছেড়েছেন। অন্যরা বলছেন, তিনি এখনো এখানেই আছেন এবং আজ বিকেল ৫টায় পদত্যাগ করার পরিকল্পনা করছেন। স্থানীয় সময় সন্ধা ৬টায় তালেবানরা দায়িত্ব নেবেন।
তবে এর কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা তা আমরা জানি না। এই মুহূর্তে আমরা কী হয় তা দেখার জন্য অপেক্ষা করছি। খুব খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে আছি আমরা। আমার কাছে টাকা নাই। এদিকে আমার ৩ থেকে ১৪ বছরের চারটি সন্তান রয়েছে।
স্ত্রী সন্তান নিয়ে যে পালাবো সেই টাকাও নাই আমরা কাছে। এদিকে সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তালেবান জালালাবাদ ও মাজার-ই-শরিফও দখল করেছে। কয়েকদিন হয়তো শ্বশুরবাড়ি গিয়ে থাকার চেষ্টা করতে পারি। কিন্তু তারপর কী হবে?